

আজও তোমার সেই কথাটিই মনে পড়ে- কিছু মনে করিনি,ক্ষমা করে দিয়েছি
I Love You Very Much - SAM
একদিন হযরত উমর (রাঃ) গভীর
ঘুমে আচ্ছন্ন আছেন । এমন সময়
হঠাত্ এক বৃদ্ধ লোক এসে ডাক
দিয়ে বলেন, হে উমর !
তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠ ।
ফজরের নামাজের সময় পার
হয়ে যাচ্ছে । হযরত উমর (রাঃ)
জানতে চাইলেন, তুমি কে ?
বৃদ্ধ বেশধারী শয়তান উত্তর
দিলেন, আমি শয়তান ! তখন হযরত
উমর (রাঃ) বললেনঃ আচ্ছা, তোমার
কাজতো মানুষকে ধোঁকা দিয়ে নামাজ
কাযা করানো । আর
তুমি কিনা আমাকে নামাজের
জন্য ডাকছো । ঘটনার হেতু কি ?
বৃদ্ধ বেশধারী শয়তান উত্তর
দেয়ঃ উমর, অনেক দিন
চেষ্টা করে গতকাল
তোমাকে ফজরের নামাজ
কাযা করাতে সক্ষম হই কিন্তু
তুমি ঘুম থেকে উঠে নামাজ
পড়ে কান্নাকাটি করে আল্লাহ্'র
কাছে ক্ষমা চেয়েছ । আল্লাহ্
তোমার নামাজ কবুল
করে তোমাকে আরো দশগুণ
সওয়াব বেশি দিয়েছেন !
কিন্তু আমি চাইনা তুমি দশগুন
সওয়াব পাও,
আগে যা পাচ্ছিলে তাই ভাল,
এজন্যই তোমাকে ফজরের
নামাজের জন্য ডেকেছি ।
........................{বুখারী}
মহান আল্লাহ্ তাঁর বান্দার প্রতি আরও বেশি দয়ালু,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
একদিনকার কথা। এক মহিলা
তাঁর ছেলে কে খুঁজছে, কোথাও পাচ্ছে না।
খুঁজেই যাচ্ছে খুঁজেই যাচ্ছে।
কোথাও কোন বাচ্চাকে দেখলেই অস্থির হয়ে উঠছে।
পরে যখন দেখছে সে তার ছেলে নয়-
তখন নিজের ভুল বুঝতে পেরে
কিছুক্ষণের জন্য হতাশ হয়ে পড়লেও
আবার নিজেকে শক্ত করে খুঁজে যাচ্ছে।
অবশেষে অনেকক্ষণ খোঁজার পর
মহিলা তার ছেলেকে দেখতে পেল।
সাথে সাথে দৌড়ে গিয়ে আঁকড়ে ধরল নিজের বুকের সাথে।
চোখ থেকে পড়ছে টপ টপ পানি।
এই দৃশ্য দেখলেন আমাদের নবী (সাঃ) ।
সাহাবীদের দিকে ফিরে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন,
“তোমাদের কি মনে হয়
এই মা তাঁর সন্তানকে আগুনে ফেলতে পারবে?”
কিছুতেই না, একদম কোনভাবেই না।
নবী (সাঃ) এরপর বললেন-
এই মা তাঁর সন্তানের প্রতি যতটা দয়ালু,
মহান আল্লাহ্ তাঁর বান্দার প্রতি আরও বেশি দয়ালু।
হাসান ও হোসেনের জন্য কিছু আটা নিয়ে...........
এক দিন মা ফাতেমা (র) হযরত আলী (র:) কে বলল, স্বামী ঘরে কিছু সুতা কেটেছি, বাজারে বিক্রি করে ক্ষুধার্ত দু'সন্তান হাসান ও হোসেনের জন্য কিছু আটা নিয়ে এসো, হযরত আলী (র:) সুতা গুলো নিয়ে বাজারে ৬ দিরহামে বিক্রি করলেন। এমন সময় এক অসহায় ছাহাবা হযরত আলী (র:) কে বলল আলী, কিছু দিরহাম কর্য হবে! আমার ঘরে বাচ্চারা না খেয়ে আছে। একথা শুনে হযরত আলী (র:) নিজের ঘরের কথা চিন্তা না করে সুতা বেচা ৬ দিরহাম ঐ অসহায় ছাহাবাকে দিয়ে দিলেন। কিছুক্ষন পর দেখল বাজারে এক ব্যক্তি একটি উট নিয়ে হযরত আলীর নিকট এসে বলল, আলী উট নিবে! হযরত আলী (র) বলল নিব, কিন্তুু দিরহাম (টাকা) নাই।লোকটি বলল নাও, টাকা পরে দিলে চলবে। এ বলে লোকটি চলে গেল, কিছক্ষন পর আর একটি লোক এসে হযরত আলীকে বলল, আলী তোমার উটটি বিক্রি করবে, নগদ ৩০০ দিরহাম দিব। হযরত আলী (র:) বললেন নাও, নগদ ৩০০ দিরহাম দাও। হযরত আলী (র:) ৩০০ দিরহাম দিয়ে উটটি বিক্রি করে উটের আসল মালিককে খুজতে লাগল। কিন্তুু পুরু বাজারে উটের আসল মালিককে খুজে না পেয়ে ঘরে চলে আসল। ঘরে এসে দেখল, নবীজি (স:) মা ফাতেমার সাথে বসে আছেন। নবীজি (স:) মুচকি হাসি দিয়ে বললেন, আলী! উটের ঘটনা আমি বলব, নাকি তুমি বলবে! হযরত আলী (র:) হয়রান হয়ে বললেন, ইয়া রসুলাল্লাহ (স:) আপনি বলুন। নবীজি (স:) বললেন, আলী প্রথমে যে তোমাকে উট বাকীতে দিয়ে ছিল, সে হচ্ছে হযরত জিব্রাঈল (আ:) আর পরে ৩০০ দিরহাম দিয়ে যে উটটি কিনে ছিল, সে হযরত ইস্রাফিল (আ:)। উট ছিল জান্নাতের মা ফাতেমার, যা দিয়ে জান্নাতে মা ফাতেমা (র:) সওয়ার হবেন। তুমি যে অসহায় ছাহাবাকে সুতা বেচা ৬ দিরহাম কর্য দিয়েছিলে, তাহা আল্লাহর নিকট খুব পছন্দ হয়েছে, আর তাহার বদলা আল্লাহ দুনিয়াতেই তোমাকে কিছু দিয়ে দিয়েছেন। আমিন।
(জামেউল মুজেজাত- ৪র্থ পৃষ্টা)
একজনরাখালের তাকওয়াও......................
হযরত উমর (রা) প্রায় সময়
ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়াতেন।
একদিন তিনি চলতে চলতে একটি জঙ্গলের
দিকে গেলেন। দেখলেন, একজন রাখাল কিছু
বকরীর পাল নিয়ে বকরীগুলোকে ঘাস
খাওয়াচ্ছে। খলীফা উমর (রাযি.)
তাকে পরীক্ষা করার জন্য তার
কাছে গেলেন। দেখলেন, সে একটা ছাগল
থেকে দুধ পান করছে। হযরত উমর (রা ঃ)
ছদ্মবেশে থাকার কারণে রাখাল তাঁকে চিনতে পারেনি।
হযরত উমর (রা ঃ) কে সে কোন মুসাফির
মনে করেছিল।
তিনি রাখালকে বললেন, হে রাখাল! আমার
ভীষণ ক্ষুধা লেগেছে,
তুমি অন্য একটি বকরীর দুধ
দোহন করে আমাকে দাও। আমি পান করে একটু
পরিতৃপ্ত হই। একথা শুনে রাখাল
বলল, হে মুসাফির! এই ছাগলের পালের মালিক
আমি নই। আমি মাত্র বেতনভুক্ত রাখাল।
যেহেতু ছাগলের মালিকানা আমার নেই,
সেহেতু আমি আপনাকে দুধ
দিতে পারব না। তিনি বললেন, যেহতু
আমি সারাদিন রাখালী করি, তাই
মালিক আমাকে অনুমতি দিয়েছেন
নিজে পান করার। অন্যকে পান করানোর
অনুমতি আমার নেই। সুতরাং আমি অন্য
কাউকে পান করাতে পারবো না।
তিনি বললেন, হে রাখাল,তুমি আমার
কাছে একটা দুধের ছাগল বিক্রি করো।
আমি এর মালিক হয়ে যাব তাহলে দুধ
খেতে পারবো, আর তুমিও কিছু
টাকা পাবে? যদি মালিক
গণনা করে বলে, ছাগল
একটা কম কেন?
তাহলে তুমি বলবে, বাঘ খেয়ে ফেলছে।
এবার রাখাল বলল,
আমার মালিক আমার
উপর আস্থা রাখেন।
আমি যা বলি তিনি তা বিশ্বাস করবেন।
কিন্তু মুসাফির ভাই,
তোমাকে এখন
বলতে হবে-
কিয়ামতের দিন যখন
আল্লাহ্ আমাকে জিজ্ঞেস
করবেন, একটা ছাগল
কী করেছিলে? তখন
কি তোমার জবাব
দিলে আল্লাহর
সামনে পার পাওয়া যাবে?
সাহাবাযুগে একজন
রাখালের তাকওয়াও
কি রকম মজবুত ছিল।
রাসূল চোখ ভেজা অবস্হায় বলতে থাকলেন.......
মোহাম্মদ
(সাঃ) এর
জীবনের শেষ মূহুর্ত
চলছে।
'হঠাৎ
সেখানে একজন লোক
এসে বললেন'সালাম'আমি
কি ভিতরে আসতে পারি।
ফাতিমা (রাঃ)
বললেন,
দুঃখিত
আমার পিতা খুবই
অসুস্হ। -
ফাতিমা (রঃ)
দরজা বন্ধ
করে রাসূলের
কাছে গেলেন।
মুহাম্মদ (সাঃ)
বললেন, কে সেই
লোক?
ফাতিমা বললেন, এই
প্রথম
আমি তাকে দেখেছি।
আমি তাকে চিনি না।
-
শুনো ফাতিমা,
সে হচ্ছে আমাদের
এই ছোট্ট
জীবনের
অবসানকারী ফেরেশতা আজরাইল।
এটা শুনে ফাতিমার
অবস্হা তখন
ক্রন্দনরত বোমার
মতো হয়ে গিয়েছে। -
রাসূল
(সাঃ) বললেন,
হে জিবরাঈল আমার
উম্মতের
কি হবে? আমার
উম্মতের নাজাতের
কি হবে?
জিবরাঈল (আঃ)
বললেন,
হে রাসুল
আপনি চিন্তা করবেন
না, আল্লাহ
ওয়াদা করেছেন
আপনার
উম্মতের নাজাতের
জন্যে। - মৃত্যুর
ফেরেশতা ধীরে ধীরে রাসূলের
কাছে এলেন জান
কবজ করার
জন্যে। মালাইকাত
মউত
আজরাইল
আরো কাছে এসে ধীরে ধীরে রাসূলের
জান
কবজ
করতে থাকলেন।
পাশে দাঁড়িয়ে থাকা জিব্রিলকে রাসূল
বললেন
ঘোঙানির সাথে, ওহ
জিবরাঈল
এটা কেমন
বেদনা দায়ক
জান কবজ করা। -
ফাতিমা (রাঃ) তার
চোখ বন্ধ
করে ফেললেন,
আলী (রাঃ)
তার দিকে উপুড়
হয়ে বসলেন,
জিবরাঈল তার
মুখটা উল্টা দিকে ফিরিয়ে নিলেন।
- রাসুলল(সঃ)
বললেন,
হে জিবরাঈল
তুমি মুখটা উল্টা দিকে ঘুরালে কেন,
আমার
প্রতি তুমি বিরক্ত ?
জিবরাঈল
বললেন,
হে রাসূলুল্লাহ
সাকারাতুল মউতের
অবস্হায়
আমি আপনাকে কিভাবে দেখে সহ্য
করতে পারি। -
ভয়াবহ ব্যাথায়
রাসূল ছোট্ট
একটা গোঙানি দিলেন।
রাসূলুল্লাহ বললেন,
হে আল্লাহ
সাকারাতুল
মউতটা (জান
কবজের সময়) যতই
ভয়াবহ হোক,
সমস্যা নেই,
আমাকে সকল
ব্যথা দাও
আমি বরণ করবো,
কিন্তু
আমার
উম্মাহকে ব্যথা দিওনা।
রাসূলের
শরিরটা ধীরে ধীরে ঠান্ডা হয়ে আসতে
লাগলো।
তার পা, বুক কিছুই
নড়ছে না এখন
আর। রাসূলের
চোখের পানির
সাথে তার
ঠোঁটটা কম্পিত
ছিলো,
তিনি কিছু বলবেন
মনে হয়। -
আলি (রাঃ) তার
কানটা রাসূলের
মুখের
কাছে নিয়ে গেলো।
রাসূল
বললেন, নামাজ
কায়েম
করো এবং তোমাদের
মাঝে থাকা দূর্বলদের
যত্ন
নাও। - রাসূলের ঘরের
বাইরে চলছে কান্নার
আওয়াজ,
সাহাবীরা একজন
আরেকজন
কে জড়িয়ে ধরে উচ্চস্বরে কান্নারত।
আলী (রাঃ) আবার
তার
কানটা রাসূলের
মুখের
কাছে ধরলো, রাসূল
চোখ
ভেজা অবস্হায়
বলতে থাকলেন,
ইয়া উম্মাতি,
ইয়া উম্মাতি,
ইয়া উম্মাতি
রাসূল
(সাঃ)
মায়ের একটি কষ্টের নিঃশ্বাস..................
ছেলে মাকে বলছে, "মা" তুমি আমার জন্য জীবনে অনেক কষ্ট করেছো ! বলো তোমার কী খেতে মনে চায় ?? আমি আজ তোমার ঋণ শোধ করবো ! মা বলছে বাবা তাহলে বাজার থেকে ১টিকলা নিয়ে আসো ! তার পর ছেলে রাতে কলা নিয়ে এলো ! মা বলছে বাবা কলাটি তোমার বুকে উপরে রাখ যখন আমি চাবো তখনি দিও !.ছেলে ঘুমিয়ে গেলে পিঠের নিচে পরে কলাটি চ্যাপটা হয়ে যায় ! সকাল বেলা মা এসে কলা চাচ্ছে ! ছেলে বলছে মা রাতে পিঠের নিচে পরে চ্যাপটা হয়ে গেছে !মা প্রয়োজনে আমি ১ কলা এনেদিবো !মা বলছে বাবারে তোমাকে আমি পৌষ মাসের শীতে ডান কাদে শুয়ায়ছি প্রসাব করে দিয়েছিস ! বাম কাদে শুয়ায়ছি প্রসাব করে দিয়েছিস ! তার পর বুকে শুয়ায়ছি,প্রসাব করে বুক বিঝায়ে দিয়েছিলি ! কই ১দিনের জন্য তো পিঠের নিচে তরে ফালাইনি ! তুই কী করে বলিস মায়ের ঋণ শোধ করে দিবি??
পৃথিবীতে কেবল মাত্র বাবা মা তার সন্তানকে স্বার্থহীন ভাবে ভালবাসে !দুরের লোকের ভালবাসার উদ্দেশ্য কিছু স্বার্থচিন্তা ! উদ্দেশ হীন হলেই বুঝা যায় যেন ভাল বাসাটা ছিলো বসন্ত কালের কোকিল !!!
“মায়ের একটি কষ্টের নিঃশ্বাস,
সাতটি দোযকের চেয়েও ভয়ংকর।
আর একটি সুখের হাসি, আটটি
বেহেস্তের সমান।”
_____বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)...
আমার একটা শেষ অনুরোধ............
এক ধনী আর আল্লাহভীরু বৃদ্ধ লোক একদিন
নিজের সন্তানকে ডেকে বলল:
আমার বয়স হয়েছে, যেকোন দিন আমাকে
চলে
যেতে হবে
আল্লাহ'র কাছে । আমার একটা শেষ
অনুরোধ
আছে তোমার
কাছে, আমি মারা গেলে
গোছলের পর যখন কাফন পরানো হবে, আমার
পুরাতন মোজা গুলো আমাকে পরিয়ে দিও।
ছেলে বলল: এটাতো কোন বড় চাওয়া না।
আমি
তোমার শেষ ইচ্ছা পুরন করব।
এর কিছুদিন পর লোকটি মারা গেল।
আত্মীয়,
পড়শী সবাই আসল শেষবারের মত দাফনে
অংশ
নিতে। কাফন পরানো শেষ হলে শোকে
কাতর
ছেলের হঠাৎ মনে হল বাবা'র শেষ ইচ্ছের
কথা,
আর তখনি বাবার পুরাতন মোজা খুজে নিয়ে
আসলো।
কিন্তু মোজা পরাতে সবাই বাধা দিল।
সবাইকে অনেক
অনুরোধ করলেও কেউ রাজী
হলনা না। কারণ তিন টুকরা সাদা কাপড়
ছাড়া আরকিছু দেয়া
মুসলমানদের দাফনের
নিয়মে নেই।
কিন্তু ছেলে অনড় বাবার ইচ্ছা পুরনে।
এমনসময় তার বাবা'র এক বন্ধু এগিয়ে এসে
ওকে
বলল: গতকাল তোমার বাবা আমাকে একটা
চিঠি দিয়ে বলেছিল, সে
মারা গেলে আমি যেন এটা তোমাকে
জানাজা'র সময়
দেই।
ছেলে অবাক হয়ে চিঠি নিল আর পড়তে
লাগল....
"... আমি আমার সব সম্পদ
ছেড়ে চলে গেলাম। আমি
জানি তুমি এখন আমার শেষ ইচ্ছা পুরণ
করতে চেষ্টা
করছ। কিন্তু শত চেষ্টা করেও তুমি আমাকে
একটা
পুরোনো মোজা
দিতে পারলেনা!!
এটাই নিয়ম। একদিন তোমাকেও আমার মত
সব সম্পদ,
আত্মীয়, বন্ধু সবাইকে ছেড়ে আসতে হবে-
সেদিন তুমিও শুধু তোমার ভাল কাজ আর
আল্লাহর
হুকুম যা
তুমি পালন করবে সেগুলো নিয়ে আসতে
পারবে।
এছাড়া একটা মোজাও আনতে পারবেনা।
নিজের নফসের অনুুসরণ করোনা, আল্লাহ'র
সন্তুষ্টি'র চেষ্টা করলে- উভয় জীবনই
সন্মানিত
হবে। নামাজ বাদ দিও না আর মনে রেখো
গরীব,
ইয়াতীম দেরও তোমার সম্পদে হক
আছে"।..
বাকিটা হাসি আজ তৃপ্তি সহকারে হাসলেন...........
___স্বামী তার স্ত্রীকে ইশারা করে বললো,
পানি খাবো।
.
___স্ত্রী পানি নিয়ে এসে দেখেন, স্বামী আপন মনে সিগারেট খাচ্ছে, স্ত্রীর চোখে হঠাৎই জল চলে এলো।
.
___সিগারেট খাওয়ার মাঝখানেই
পানিটা পান করলো, স্ত্রীকে বলল কান্না করছো কেন?
.
___স্ত্রী বললো, তোমার কাছে আমার একটা জিনিস চাওয়ার আছে।
.
___স্বামী মুচকি হেসে জবাব দিলো, তোমার একটা চাওয়া নয় হাজারো চাওয়া পূর্ণ করবো, বলো কি চাওয়া তোমার।
.
___স্ত্রী বললো, পৃথিবীর কোন জাগতিক সম্পদ। আমার লাগবে না, তোমার মূল্যবান সময়ের একমাস চাই, সেই মাসে শুধু আমার কথামতো চলবে।
.
___স্বামী বললো এটা আবার কোনো চাওয়া নাকি, আচ্ছা ঠিক আছে আমি রাজি, এবার একটু হাসো।
.
___স্ত্রী বললো একমাস পর বলতে পারবো হাসিটা আমার জন্য কবুল হয়েছে কিনা।
.
___স্বামী স্ত্রীর কথা বলার সময় আসরের আযান হয়ে গেছে,
.
___স্ত্রী স্বামীকে ওযু করতে বলে অন্য রুমে চলে গেলো, ফিরে আসলেন শশুড়ের সাদা একটা পান্জাবি, আর আতরের বোতলটি নিয়ে, স্বামীর গায়ে পান্জাবিটা পড়িয়ে অনেকখানি আতর লাগিয়ে, মসজিদের দিকে ইশারা করে বললো, মসজিদে যাও।
.
___স্বামী মসজিদে না গিয়ে রাস্তার পাশের দোকানে গিয়ে আড্ডা দেয়, আর জামায়াত শেষ হলে ঘরে ফিরে আসে, এমন ভাবে ৫ দিন চলার পর।
.
___স্বামী ভাবলেন এভাবে মিথ্যা বলা
সম্ভব নয়, আর সব কিছু গায়ে দিয়ে চোরের মতো রাস্তায় থাকাটা কষ্ট, তারচেয়ে ভাল হবে মসজিদে গেলে।
.
___স্বামী আজ রাস্তায় নয়, মসজিদের মধ্যেই প্রবেশ করলো, অনেক মানুষই তার দিকে অবাক নয়নে তাকালো, সবাই কেমন জানি হতগম্ভ যে ছেলেটা বখাটেদের ওস্তাদ, সে কিনা মসজিদে।
.
___স্ত্রী আজ খেয়াল করলো স্বামী কেমন জানি আনমনা, তাই জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে।
.
___স্বামী বললো, আজ আমি সাকসেস হয়েছি, স্ত্রী বললো কোন বিষয়ে, স্বামী বললো অন্য এক বিষয়ে?
.
___স্বামী সব কিছু গুছিয়েছে সেভ করবেন, স্ত্রী বাধা দিয়ে বললো একমাস তো আমার, তাহলে নিজের ইচ্ছেমত কেন সেভ হবে, আমি চাই তোমার সুন্দর দাঁড়ি থাক, স্বামী বিরক্ত বোধ করলো, তারপর ও শুনলো, যেহেতু কথা দিয়েছে।
.
___আগে দুদিন পরপর সেভ না করলেই সে কি চুলকানি, অথচ আজ ১৫ দিন সেভ করিনা, কিন্তু একটু ও চুলকায়নি, যেন নিজের অজান্তে মুখ দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ্ বের হয়ে গেল।
.
___স্ত্রী কখনোই স্বামীকে সিগারেট খেতে
দেয়না, স্বামী ভাবে একমাস তো তাই ঘরের মধ্যে না খেয়ে বাহিরে খাব, কিন্তু সেটাও আর বেশি দিন হলোনা,
.
___২০দিন পর নিজেই সিগারেট ছেড়ে দিলেন, আগে টেনশন হলে সিগারেট, এখন টেনশন হলে নামাজে দাঁড়িয়ে যাবো, নয়তো তাসবীহ পাঠ করবো।
.
___আজ ৩০ দিন পূর্ণ হলো,
স্ত্রী প্রতিদিনের ফজরের নামাজের মতো
ডাকলেন না স্বামী কে, কিন্তু অভ্যাস বড়ই ভয়ানক জিনিস, আগের মতোই স্বামী মসজিদে চলে গেল, স্ত্রী আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলেন।
.
___স্বামী নামাজ পড়ে এসে বললো, আজ আমি তোমার কাছে একটা জিনিস চাই।
.
___স্ত্রী বললো, তোমার চাওয়াটা বলতে পারো।
.
___স্বামী বললো, আমার একমাস নয়, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাকে যতদিন হায়াত দেন, ততটা দিনই তোমার, তুমি কি এটা নিবেনা?
.
___স্ত্রী মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললো
.
___স্বামী খুব খুশি হলো, স্ত্রীরও মনের ইচ্ছা পূর্ণ হলো।
.
___সেদিনের বাকিটা হাসি আজ তৃপ্তি সহকারে হাসলেন।
.
___জানি বেশীর ভাগ ছেলেরা নেশা করে, কিন্তু বোনেরা আপনারা ধর্য্য হারা না হয়ে একটু চেষ্টা করুন তাকে পাল্টানোর।
.
____দেখুন বোন!
যেটা বাবা মা পরিবর্তন করতে
পারে না সেটা কিন্তু আপনাকে দিয়েই
সম্ভব!
"হে আল্লাহ্! সবার জন্য নেক্কার সুন্দরী স্ত্রী দান করুন।
____আমীন
আবু জর আল গিফারী (রঃ) – ইসলাম গ্রহনের পূর্বে যিনি ছিলেন দূর্ধর্ষ ডাকাত
মক্কা যে গিরিপথের মাধ্যমে বাকী পৃথিবীর সাথে যুক্ত ছিল সেটা ছিল ওয়াদান ভ্যালী এবং সেখানেই ছিল গিফার গোত্রের বাস। অত্যন্ত দুর্ধর্ষ এই জাতি মক্কা এবং সিরিয়ার মধ্যে যে সকল বানিজ্য বহর চলাচল করত তাদের জিম্মি করে চাঁদবাজী করত । বানিজ্য কাফেলা তাদের দাবী পূরণে ব্যর্থ হলে তারা মালামাল আর ধনসম্পদ লুন্ঠন করত । জুনদুব ইবন্ জুনাদা নামে এই গোত্রের ভয়ংকর এবং ক্ষিপ্র একজন নেতা ছিল, যাকে মানুষ আবু জর ডাক নামেই বেশী চিনত।
লোকটি সমগ্র আরব অঞ্চলে তার সাহস এবং স্থিরচিত্তের জন্য বিখ্যাত ছিল। লোকজন তাকে সেই মানুষ হিসাবেও জানত যে মানুষ আরবের সকলে যে ধর্মবিশ্বাস নিয়ে জীবনধারণ করে সে তাকে মিথ্যা বলে মনে করত।
ওয়াদান মরুভূমিতে অবস্থানকালে একদিন তাঁর কাছে খবর পৌঁছাল যে, মুহাম্মাদ নামের একজন ব্যক্তি মক্কায় নিজেকে আল্লাহর নবী বলে পরিচয় দিচ্ছে। একথা শোনার পর তার অন্তরে খেলে গেল এক অদ্ভূত আলোড়ন। মন বলল এই লোকটিই হয়ত সে, যে এ জাতিকে মূর্তিপূজা এবং পাপাচার থেকে আলোর দিকে নিয়ে আসবে। এ জনকে ও জনকে জিজ্ঞেস করেও তিনি কোন সদুত্তর পেলেন না। অস্থির মনের ব্যাকুলতা আরো বরং বেড়ে গেল। মন বলল আর তো বিলম্ব করা যায় না। বিশ্বস্ত কাউকে দিয়ে নিশ্চিত খবর তার চাই।
তাঁর ছোট ভাই এর নাম ছিল আনিস। বড় ভাই এর অস্থিরতা তার চোখেও ধরা পড়েছিল। আনিস নিজেও বড় ভাইকে গভীরভাবে ভালোবাসতো। আবু জর একদিন তাকে ডেকে নিয়ে বললেন, ”তুমি মক্কায় চলে যাও। ওখানে গিয়ে চুপি চুপি সে লোকটিকে খুঁজে বের করবে যে নিজেকে নবী বলে পরিচয় দিচ্ছে। সাবধান থেকো, ওখানকার মানুষ জানতে পারলে তোমাকে এমনকি মেরেও ফেলতে পারে। লোকটি কি কি বলে তুমি তা মনোযোগ দিয়ে শুনো, বিশেষ করে সে কথাগুলো, যা সে আল্লাহর পক্ষ থেকে পেয়েছে বলে বলছে। দ্রুত যাও আর ফিরে এসে আমাকে সব জানাও।”
আনিস দেরী না করে বেরিয়ে পড়ল। মক্কার বিপদসংকুল পরিস্থিতি। নতুন নবীর দাবীদার মুহাম্মাদের সন্ধান করা অত্যন্ত বিপজ্জনক। সংশয় আর শংকার মধ্যেই আনিস একদিন খুঁজে বের করলো মুহাম্মাদকে (আল্লাহর করুনা শান্তি তাঁর উপর বর্ষিত হোক)। আনিস তাঁর কথা শুনলেন, তারপর মক্কা থেকে তিনি দ্রুত ওয়াদান এর পথে রওয়ানা হলেন।
ইতিমধ্যেই আবু জর অস্থির হয়ে উঠেছেন। মক্কা-ওয়াদান পথে তার উদ্বিগ্ন দৃষ্টি আনিসের আগমন পথের প্রতীক্ষায় ছিল। একদিন দেখা গেল আনিস ফিরে আসছে। ছুটে গেলেন তিনি আনিসের কাছে। উদ্বিগ্ন আবু জর জিজ্ঞেস করলেন, ”কি দেখলে ওখানে, দেখা হয়েছিলো তাঁর সাথে?” ”হ্যাঁ। একজন মানুষকে ওখানে সত্যিই আমি পেয়েছি যে নিজেকে আল্লাহর প্রেরিত নবী বলে বলছে। সে কবি নয় এবং সে মানুষকে কেবল সত্য ও সৎকাজের দিকে ডাকছে।” ”মানুষজন তার সম্বন্ধে কি বলছে?” ”তারা তাকে যাদুকর, মিথ্যাবাদী আর কবি হিসাবে বলছে।” ”তুমি আমার কৌতুহল মেটাতে পারলে না। তুমি কি আমার পরিবারের দিকে খেয়াল রাখতে পারবে যদি আমি নিজেই মক্কা যাই আর সেই নবী বলে দাবীদার লোকটির সবকিছু নিজেই দেখে আসি?” ”হ্যাঁ। তবে সাবধান, মক্কার লোকদের ব্যাপারে খুব সতর্ক থাকবেন।”
আর দেরী না করে আবু জর বেরিয়ে পড়লেন। তারুণ্যে উদ্দীপ্ত যৌবন তার। জীবনে কতবার মানুষের সম্পদ লুট করার জন্য ক্ষিপ্র গতিতে ঘোড়া ছুটিয়েছেন, আর আজ তিনি চলেছেন এক মহাসত্যকে গ্রহণ করে নেবার জন্য। প্রখর সূর্য, গভীর রাতের নিকষ কালো অন্ধকার সবকিছু পেছনে ফেলে অকুতোভয় মানুষটি এগিয়ে চললেন মক্কার দিকে।
মক্কায় পৌঁছেই তীক্ষ্মধী আবু জর বুঝতে পারলেন শুধুমাত্র মুহাম্মাদের সাথে দেখা করার চেষ্টার কারণে তিনি অত্যন্ত অনিরাপদ ও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন এবং এজন্য তিনি কঠিন সতর্কতা অবলম্বন করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিলেন। আবু জর লক্ষ্য করলেন কুরাইশরা মুহুম্মাদের আনুসারীদের নির্মম শাস্তি দিচ্ছে আর কে কে মুহাম্মাদের কাছে আসছে তা দেখার জন্য চতুর গোয়েন্দাবাহিনী নামিয়েছে। আবু জর জানতেন যে এ অবস্থা তাকে মোকাবেলা করতে হতে পারে, তাই তিনিও প্রস্তুত ছিলেন। বুদ্ধিমান আবু জর এজন্য কোন লোকের কাছে মুহাম্মাদের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা থেকে বিরত রইলেন। পরিস্থিতি উৎসুক দৃষ্টি নিয়ে পর্যবেক্ষণ করে তিনি রাতে কাবাঘরের এক কোণে শুয়ে পড়তেন। একদিন আলী ইবন্ আবী তালীব তাকে দেখে ভাবলেন তিনি নিশ্চয়ই একজন আগন্তুক। আলী তাঁকে তার বাড়ীতে যাবার জন্য আমন্ত্রণ জানালেন। আবু জর মেহমান হিসাবে চললেন আলীর বাড়ীতে। রাত যাপন করে তিনি সকালে আবার কাবার কাছে চলে এলেন, তবে আবু জর বা আলী কেউ কাউকে কোন প্রশ্ন করলেন না।
মুহাম্মাদ নামের নবী বলে দাবীদার লোকটির দেখা পাবেন বলে পরদিন সারাদিন তিনি কাবার কাছে খুঁজে খুঁজে কাটিয়ে দিলেন। কিন্তু দেখা পেলেন না। রাতে আবার চলে এলেন কাবার মসজিদে ঘুমাতে এবং আজও আলী ইবন্ আবী তালিব দেখলেন তাকে। আজ আলী বললেন, “এখনওকি সে সময়টা হয়নি যখন মানুষ বাড়ীর দিকে যায়, চলুন।”
আবু জর আজও আলীর সাথে তার বাড়ীতে গেলেন এবং আজও দুজনের কেউ কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করলেন না।
এমনিভাবে তৃতীয় দিন এল। আজও আলীর মেহমান হয়েই আবু জর এসেছেন আলীর বাড়ীতে। আজ আলী জিজ্ঞেস করলেন, “আপনি কি আমাকে বলবেন কেন আপনি মক্কায় এসেছেন?” ”আমি আপনাকে তখনই বলব যখন আপনি আমার সাথে এই প্রতিজ্ঞা করবেন যে, আমি যা চাই তার সঠিক সংবাদ আপনি আমাকে দেবেন আর কাউকে তা জানাবেন না।” আলী রাজী হলেন। আবু জর বললেন, ”আমি মক্কা থেকে অনেক দূরের পথ পাড়ি দিয়ে এখানে এসেছি একজন লোকের খোঁজে, যার নাম মুহাম্মাদ, যে নিজেকে নবী বলে পরিচয় দিচ্ছে। আমি শুধু তার সাথে একটু দেখা করে তার কিছু কথা শুনতে চাই।”
আনন্দে আলীর চেহারা উদ্ভাসিত হয়ে উঠল। আলী বললেন, ”আল্লাহর শপথ, তিনি সত্যিই নবী।” আলী তাকে রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) এবং তিনি যে শিক্ষা দিচ্ছেন তার থেকে কিছু আবু জরকে শোনালেন। অবশেষে তিনি বললেন, ”কাল সকালে আমি আপনাকে মুহাম্মাদের (সাঃ) কাছে নিয়ে যাব। আমি যেখানে যাব আপনি দূর থেকে আমাকে অনুসরণ করবেন। আমি যদি আপনার জন্য বিপজ্জনক কোন কিছু দেখি তাহলে আমি মূত্রত্যাগ করার ভাব করে থেমে যাব। যদি আমি চলতে থাকি আপনি আমাকে অনুসরণ করবেন এবং আমি যেখানে প্রবেশ করি আপনিও সেখানে প্রবেশ করবেন।”
সে রাতে আবু জর এর ঘুম হল না। এতদিন ধরে যে মানুষটিকে দেখার জন্য তিনি হন্যে হয়ে ঘুরছেন কাল তাঁরই সাথে দেখা হতে যাচ্ছে। আর তিনি যদি আল্লাহর নবীই হয়ে থুকে তাহলে কী সৌভাগ্যময় দিন তার আসতে যাচ্ছে কাল।
পরদিন কথামত আবু জর চললেন আলীর সাথে রাসুল মুহাম্মাদ (সাঃ) এর সাথে দেখা করার জন্য। আলীর সাথে দূরত্ব বজায় রেখে তিনি আলীর পদচিহ্ন অনুসরণ করতে লাগলেন। কোন বিপদ ছাড়াই একসময় তারা পৌঁছে গেলেন কাঙ্খিত গন্তব্যে। কত কথা আবু জর যেন ভেবে রেখেছিলেন মুহাম্মাদকে জিজ্ঞাসা করার জন্য, তার কথাগুলো একটু যাচাই করে নেবার জন্য, কিন্তু আজ যখন তিনি মুহাম্মাদ নামের এই লোকটির সামনে এলেন, তার আগেই আল্লাহ্ ঈমানের আলো আবু জরের অন্তরে ঢেলে দিয়েছিলেন। প্রথম দেখাতেই রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) কে তিনি বললেন, ”আপনার উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে শান্তি বর্ষিত হোক হে আল্লাহর রাসুল।” ”আস্সালামু আলাইকা ইয়া রাসুলাল্লাহ্”।
রাসুলুল্লাহ্, তাঁর উপর আল্লাহর শান্তি ও করুণা বর্ষিত হোক, আবু জরের চেয়েও সুন্দর ভাষায় সে সম্বোধনের জবাব দিলেন, ”তোমার উপরও আল্লাহর শান্তি, রহমত ও করুণা বর্ষিত হোক।” ”ওয়ালাইকুম আস্সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ্ ওয়া বারাকাতুহু”। আর এভাবেই আবু জর হলেন প্রথম মানুষ যিনি আল্লাহর রাসুলকে সেই কথাগুলো দিয়ে সম্বোধন করলেন যা পরবর্তিতে মুসলিমদের জন্য সম্বোধন রীতি হিসাবে নির্ধারিত হয়েছে। রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) তাকে স্বাগত জানরালেন এবং ইসলামের দাওয়াত দিলেন। তিনি তাকে কুরআন থেকে কিছু বাণী পড়ে শেনালেন। আবু জর মোটেও দেরী করলেন না, সত্যের আলো তার হৃদয়ে আল্লাহ্ প্রজ্জ্বলিত করে দিয়েছিলেন। আল্লাহ্ ও তার রাসুলকে বিশ্বাস করে সাক্ষ্যের উচ্চারণ তার মুখ থেকে উচ্চারিত হলো। আর ভাগ্যবান এই লোকটি এভাবেই প্রথম দিককার মুসলিমদের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত হলেন, যাদের সীমাহীন মর্যাদার কথা স্বয়ং আল্লাহ্ ঘোষনা করেছেন। এরপরের কথা আমরা আবু জরের মুখ থেকেই শুনব।
“এরপর থেকে আমি রাসুল, তাঁর উপর আল্লাহর শান্তি ও করুণা বর্ষিত হোক, এর সাথে মক্কায় থাকতে লাগলাম। তিনি আমাকে ইসলাম এবং কুরআন শিক্ষা দিলেন। রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) আমাকে বললেন, ”তোমার ইসলাম গ্রহণের কথা তুমি এখানে মক্কার কাউকে জানিও না। আমার ভয় হয়, তা জানলে ওরা তোমাকে মেরে ফেলবে।”
আবু জর তারুণ্যদীপ্ত দুঃসাহসিক মানুষ। ইসলাম গ্রহণের আগেও তিনি কাউকে কখনও ভয় পাননি, বরং এ লোকটির সাহস আর পৌরুষ সবাইকে অবাক করেছে। আজ ঈমানের তেজ তার অন্তরে। তিনি কি কাউকে ভয় পেতে পারেন? আবু জর বললেন, ”যার হাতে আমার প্রাণ সেই মহান সত্ত্বার শপথ ইয়া রাসুলাল্লাহ্, আমি ততক্ষন পর্যন্ত মক্কা ত্যাগ করব না যতক্ষন না আমি কাবার প্রঙ্গনে কুরাইশদের মাঝখানে গিয়ে যে সত্য আল্লাহ্ আমাকে দিয়েছেন সে সত্যের ঘোষণা না দেব।”
রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) নিশ্চুপ রইলেন। আমি কাবার মসজিদে গেলাম। কুরাইশরা সেখানে বসে ছিল এবং নিজেদের মধ্যে কথা বলছিল। আমি তাদের মাঝখানে গিয়ে পৌঁছালাম এবং আমার গলার সর্বোচ্চ আওয়াজে বললাম, ”কুরাইশগণ, আমি তোমাদের ঘোষণা করছি যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ্ নাই এং মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসুল।”
আমার কথার সাথে সাথে তাদের মধ্যে বিস্ময়কর প্রতিক্রিয়া হল। তারা লাফ দিয়ে উঠে পড়ল এবং বলতে লাগল, ”একে এখনই ধর, সে নিজের দীন ত্যাগ করেছে।” তারা আমাকে ধরে ফেলল, আমার উপর চড়ে বসল আর আমাকে অত্যন্ত নির্দয়ভাবে মারতে লাগলো। তাদের সেই বীভৎস মার আমাকে প্রায় মৃত্যুর কাছাকাছি নিয়ে যাচ্ছিল। ঠিক সে সময় আব্বাস বিন আবদুল মুত্তালিব, যিনি রাসুলুল্লাহর চাচা, আমাকে চিনতে পারলেন। তিনি আমার উপর আচ্ছাদনের মত ঝুঁকে পড়লেন এবং আমাকে তাদের মার থেকে রক্ষা করলেন। তারপর তাদের বললেন, ”তোমাদের ধ্বংস হোক, এ তোমরা এ কি করছ? তোমরা কি গিফার গোত্রের একজন লোককে মেরে ফেলছ অথচ তোমাদের ব্যবসা ও বাহনগুলো গিফার গোত্রের উপর দিয়েই মক্কা থেকে বের হবে।” আব্বাসের এ কথায় তারা আমাকে ছেড়ে দিল।
এ ঘটনার পর আমি রাসুলুল্লাহ্, তাঁর উপর আল্লাহর শান্তি ও করুণা বর্ষিত হোক, এর কাছে ফিরে গেলাম। যখন তিনি আমার ক্ষতবিক্ষত অবস্থা দেখলেন তখন বললেন, ”আমি কি তোমাকে বলিনি মক্কার লোকদের সামনে ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা না দেবার জন্য।” আমি বললাম, ”ইয়া রাসুলাল্লাহ্, এ কাজটি করার জন্য আমি মন থেকে চাইছিলাম এবং তা আমি পূরণ করেছি”। ”তোমার জাতির কাছে ফিরে যাও, আর তুমি যা দেখেছ ও যা শুনেছ তা তাদেরকে জানাও। তাদেরকে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দাও। আল্লাহ্ হয়তো তোমার মাধ্যমেই তাদেরকে কল্যাণের দিকে নিয়ে আসবেন এবং তাদের মাধ্যমে তোমাকে পুরস্কৃত করবেন। আর যখন তুমি শুনবে যে আমি প্রকাশ্যে চলে এসেছি, তখন তুমি আমার কাছে চলে এসো।”
রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) এর এ আদেশের পর আমি আমার জাতির কাছে চলে এলাম। আমার পৌঁছানোর খবর পেয়ে আমার ভাই আমার কাছে ছুটে এল। ”আপনি কি করলেন সেখানে?”, সে আমাকে জিজ্ঞেস করল। আমি বললাম যে, আমি মুসলিম হয়েছি আর মুহাম্মাদ যে শিক্ষা দিচ্ছেন তা সত্য বলে বিশ্বাস করেছি। ”আমি আপনার ধর্ম আর মতের বিরুদ্ধে নই, আজ থেকে আমিও মুসলিম আর বিশ্বাসী হিসাবে ঘোষনা করলাম।”
দুই ভাই এরপর তাদের মায়ের কাছে গেল এবং মাকে ইসলামের দাওয়াত দিল। মা বললেন, ”তোমাদের দু ভাইয়ের বিশ্বাসের সাথে আমার কোন দ্বিমত নেই। আজ থেকে আমিও ইসলামে প্রবেশ করলাম।”
সেদিন থেকেই এ বিশ্বাসী মুসলিম পরিবারটি গিফার গোত্রের লোকদের অক্লান্তভাবে ইসলামের দাওয়াত দিয়ে চলল। ফলশ্র“তিতে গিফার গোত্রের অধিকাংশ লোক ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় নিল।
আবু জর রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) মদিনায় হিজরতের আগ পর্য়ন্ত ওয়াদান মরুভূমিতে তাঁর গোত্রে অবস্থান করতে লাগলেন। বদর, উহুদ ও খন্দকের যুদ্ধের সময় পর্য়ন্ত এ গোত্রটি ওয়াদান মরুভূমিতে অবস্থান করতে লাগল। অবশেষে রাসুল (সাঃ) এর নির্দেশে আবু জর এরপর মদিনায় চলে এলেন। আবু জর রাসুল (সাঃ) এর কাছে অনুমতি চাইলেন সর্বক্ষন তাঁর একান্ত সান্নিধ্যে থাকার জন্য এবং তাঁর ব্যক্তিগত কাজে লাগার জন্য। রাসুল (সাঃ) তাঁকে অনুমতি দিলেন এবং তার সাহচার্য ও কাজকর্মে সবসময় সন্তুষ্ট ছিলেন। রাসুল (সাঃ) প্রয়ই আবু জরকে অন্যদের থেকে অগ্রাধিকার দিতেন এবং যখনই তার সাথে দেখা হত তিনি তার দিকে তাকিয়ে হাসতেন আর তাঁকে বেশ প্রফুল্ল দেখাত।
সময় বয়ে চলল এবং একদিন রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) মৃত্যুবরণ করলেন। আবু জর এরপর আর মদিনা থাকতে পারলেন না। প্রতিটি মুহূর্তে রাসুলের (সাঃ) শূন্যতা তাকে ভীষন আবেগপ্রবন করে তুলত। রাসুলের (সাঃ) যে অভিভাবকত্ব আবু জরকে ছায়ার মত আগলে রেখেছিল তার অভাব তাকে প্রতিটি সেকেন্ডে যেন বিদ্ধ করছিল। আবু জর মদিনা ত্যাগ করলেন এবং আবু বকর এবং উমার এর পুরো খিলাফতকাল তিনি সিরিয়ার মরুভূমিতে নিভৃতে কাটিয়ে দিলেন।
উসমান ইবন্ আফফান (রাঃ) এর খিলাফতকালে আবু জর দামাস্কাসে অবস্থান করছিলেন। দুনিয়ার প্রতি চিরকাল উদাসীন আবু জর লক্ষ্য করলেন মুসলিমরা পরকাল বাদ দিয়ে দুনিয়া এবং বিলাসিতার দিকে ঝুঁকে পড়েছে। তিনি এতে অত্যন্ত ব্যথিত হয়ে পড়লেন। উসমান (রাঃ) তাকে মদিনায় ডেকে পাঠালেন। মদিনায় এসেও আবু জর মুসলিম সমাজের বিলাসিতায় মজে যাবার চিত্রই দেখলেন। অবিশ্বাস্য রকম দৃঢ় ও সারাজীবন একই রকম দুনিয়াবিমুখ এ লোকটি মুসলিমদের এ পরিবর্তন সহজভাবে নিতে পারলেন না। এর ফলে শাসক খিলাফতের সাথে তাঁর দ্বন্দ্ব বাড়তে লাগল, এমনকি আবু জরের দৃঢ় দুনিয়া বিমুখতায় মুসলিম সমাজে বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা দেখা দিল। এহেন অবস্থায় খলিফা উসমান তাঁকে ডেকে পাঠালেন। তিনি তাঁকে মদিনার কাছে নির্জন আল-রাবাতাহ্ মরুভূমিতে চলে যাবার জন্য অনুরোধ করলেন। আবু জর লোকালয় থেকে অনেক দূরে রাবাতাহ্য় চলে গেলেন এবং সেখানে প্রাণপ্রিয় রাসুল (সাঃ) এর সুন্নাহ্ আঁকড়ে ধরে বাস করতে লাগলেন। মরুভূমিতে তাঁর বসবাসকালীন জীবনে একবার এক লোক তাঁর সাথে দেখা করতে এল। অত্যন্ত আশ্চর্য হয়ে সে লক্ষ্য করল আবু জরের বাড়ী প্রায় শূন্য, কোন সম্পদ বলতে সেখানে কিছু নেই। লোকটি তাঁকে জিজ্ঞেস করল, ”আপনার সম্পদ কোথায়?” তিনি উত্তর করলেন, ”পৃথিবীর পরের জীবনে আমার একটি বাড়ী আছে। আমার সব উত্তম সম্পদগুলো আমি সেখানে পাঠিয়ে দিয়েছি।” লোকটি বুঝল আবু জর কি বুঝাতে চাচ্ছেন। ”কিন্তু যতদিন আপনি এ দুনিয়াতে আছেন, ততদিন আপনার কিছু সম্পদ থাকা উচিৎ”। আবু জর উত্তর করলেন, ”যিনি এ পৃথিবীর মালিক, তিনি তো আমাকে এ সম্পদের কাছে ছেড়ে দেবেন না”।
একবার সিরিয়ার আমীর দূত পাঠিয়ে আবু জরকে তাঁর প্রয়োজন মেটানোর জন্য তিনশো দীনার পাঠিয়ে দিল। আবু জর এই বলে আমীরের দেয়া দীনার ফেরত পাঠালেন যে, ”আমীর কি এ দীনারগুলো দেবার জন্য আমার চেয়ে বেশী চাহিদাসম্পন্ন ভৃত্য আর কাউকে খুঁজে পেলেন না?”
৩২ হিজরী। আবু জরের মৃত্যুর সময় উপস্থিত হয়েছে। নির্জন মরুভূমিতে তিনি আর তাঁর স্ত্রী একা। রাবাতাহ্ ছিল এমন একটি যায়গা যেখান দিয়ে সাধারণত একেবারেই লোক চলাচল হত না, তার উপর সে সময়টা এমন ছিল যখন কোন বাণিজ্য কাফেলাও যাতায়াত করত না।। মৃত্যুপথযাত্রী আবু জরের অবস্থা দেখে তাঁর স্ত্রী ব্যাকুল হয়ে পড়লেন কোন সাহায্যের আশায়। স্ত্রীর এ অবস্থা দেখে আবু জর বললেন, ”চিন্তা করো না, আমি রাসুলাল্লাহ, তাঁর উপর আল্লাহর করুণা বর্ষিত হোক, কে বলতে শুনেছি, তোমাদের মধ্যে এখানকার একজনের মৃত্যু হবে নির্জন মরুভূমিতে। কিন্তু তার মৃত্যুর সময় মুমিনদের একটি দল সেখানে উপস্থিত হবে। আমি নিশ্চিত সে ব্যক্তিটিই আমি, কারণ সেদিন আমরা যারা সেখানে উপস্থিত ছিলাম তাদের সবাই মৃত্যুবরণ করেছেন। কেবল আমিই বাকী। তুমি পথের দিকে খেয়াল রাখ। নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসুল মিথ্যা বলেন নি।” আবু জর কিছুক্ষনের মধ্যেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলেন। আবু জরের স্ত্রী একবার স্বামীর কাছে আরেকবার উঁচু টিলার উপর উঠে দূরে খেয়াল করতে লাগলেন। এ অসময়ে কে আসবে এই অপ্রচলিত পথে এই চিন্তায় তিনি অস্থির হয়ে পড়লেন। অবশেষে দূরে দেখা গেল ধুলোর ঝড় তুলে একদল লোক এদিকেই আসছে। কাফেলাটি এসে আবু জরকে অসহায় অবস্থায় দেখতে পেয়ে জিজ্ঞেস করল এ লোকটি কে? তাঁর স্ত্রী উত্তর করলেন, আবু জর। লোকেরা বলল, রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) এর সাহাবী আবু জর? তাঁর স্ত্রী বললেন, ”হ্যাঁ।” লোকেরা অত্যন্ত অস্থির হয়ে বলল, ”আমাদের জান কুরবান হোক”। তারা দ্রুত আবু জরের জানাজা ও দাফন সম্পন্ন করলেন। প্রখ্যাত সাহাবী আবদুল্লাহ্ ইবন্ মাসউদ (রাঃ) তাঁর জানাজার সালাত পড়ান।
এমনিভাবে আবু জর ইসলাম গ্রহণের পর থেকে তাঁর জীবন অতিবাহিত করেছেন দুনিয়াবিমুখ হয়ে কেবলমাত্র আল্লাহ্ আর তাঁর রাসুলের আনুগত্যের মাধ্যমে। একদিন যে লোকটি ওয়াদান ভ্যালীর আতঙ্ক আর ত্রাসের নাম ছিল, সে ব্যক্তিটিই একদিন নির্লোভ আর দুনিয়াবিমুখতার দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। ঈমানের মাধ্যমে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তাঁর অন্তরকে এমনই পরিবর্তন করেছিলেন। রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) কে তিনি এতই ভালবাসতেন যে তাঁর মৃত্যুর পর যখনই তিনি রাসুলের (সাঃ) কথা মনে করতেন, তখনই অঝোর ধারায় কাঁদতেন। অত্যন্ত আশ্চর্যের ব্যপার এই যে এই দুর্ধর্ষ মানুষটি সম্পর্কেই রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন, ”আকাশের নীচে এবং পৃথিবীর উপর আবু জরের চেয়ে বিশ্বাসী ও সত্যবাদী আর কেউ নেই”।
আবু হুরাইরা (রা:) ও এক জ্বীনের গল্প
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক রমজান মাসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে যাকাতের সম্পদ রক্ষা করার দায়িত্ব দিলেন। দেখলাম, কোন এক আগন্তুক এসে খাদ্যের মধ্যে হাত দিয়ে কিছু নিতে যাচ্ছে। আমি তাকে ধরে ফেললাম। আর বললাম, আল্লাহর কসম! আমি অবশ্যই তোমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে নিয়ে যাবো। সে বলল, আমি খূব দরিদ্র মানুষ। আমার পরিবার আছে। আমার অভাব মারাত্নক। আবু হুরাইরা বলেন, আমি তাকে ছেড়ে দিলাম।
সকাল বেলা যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে আসলাম, তখন তিনি বললেন, কী আবু হুরাইরা! গত রাতের আসামীর খবর কি? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! সে তার প্রচন্ড অভাবের কথা আমার কাছে বলেছে। আমি তার উপর দয়া করে তাকে ছেড়ে দিয়েছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, অবশ্য সে তোমাকে মিথ্যা বলেছে।দেখবে সে আবার আসবে।
আমি এ কথায় বুঝে নিলাম সে আবার আসবেই। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সে আবার আসবে। আমি অপেক্ষায় থাকলাম। সে পরের রাতে আবার এসে খাবারের মধ্যে হাত দিয়ে খুঁজতে লাগল। আমি তাকে ধরে ফেললাম। আর বললাম, আল্লাহর কসম আমি অবশ্যই তোমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে নিয়ে যাবো। সে বলল, আমাকে ছেড়ে দাও। আমি খুব অসহায়। আমার পরিবার আছে। আমি আর আসবো না। আমি এবারও তার উপর দয়া করে তাকে ছেড়ে দিলাম। সকাল বেলা যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে আসলাম, তিনি বললেন, কী আবু হুরাইরা! গত রাতে তোমার আসামী কী করেছে? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! সে তার চরম অভাবের কথা আমার কাছে বলেছে। তার পরিবার আছে। আমি তার উপর দয়া করে তাকে ছেড়ে দিয়েছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, অবশ্য সে তোমাকে মিথ্যা বলেছে।
দেখো, সে আবার আসবে।
তৃতীয় দিন আমি অপেক্ষায় থাকলাম, সে আবার এসে খাবারের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে খুঁজতে লাগল। আমি তাকে ধরে ফেললাম। আর বললাম, আল্লাহর কসম আমি অবশ্যই তোমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে নিয়ে যাবো। তুমি তিন বারের শেষ বার এসেছ। বলেছ, আসবে না। আবার এসেছ। সে বলল, আমাকে ছেড়ে দাও। আমি তোমাকে কিছু বাক্য শিক্ষা দেবো যা তোমার খুব উপকারে আসবে। আমি বললাম কী সে বাক্যগুলো? সে বলল, যখন তুমি নিদ্রা যাবে তখন আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে। তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাকে একজন রক্ষক পাহাড়া দেবে আর সকাল পর্যন্ত শয়তান তোমার কাছে আসতে পারবে না। আমি তাকে ছেড়ে দিলাম।
সকাল বেলা যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে আসলাম, তখন তিনি বললেন, কী আবু হুরাইরা! গত রাতে তোমার আসামী কী করেছে? আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সে আমাকে কিছু উপকারী বাক্য শিক্ষা দিয়েছে, তাই আমি তাকে ছেড়ে দিয়েছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, তোমাকে সে কী শিক্ষা দিয়েছে? আমি বললাম, সে বলেছে, যখন তুমি নিদ্রা যাবে, তখন আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে। তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাকে একজন রক্ষক পাহাড়া দেবে আর সকাল পর্যন্ত শয়তান তোমার কাছে আসতে পারবে না।
আর সাহাবায়ে কেরাম এ সকল শিক্ষণীয় বিষয়ে খুব আগ্রহী ছিলেন- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, সে তোমাকে সত্য বলেছে যদিও সে মিথ্যাবাদী। হে আবু হুরাইরা! গত তিন রাত যার সাথে কথা বলেছো তুমি কি জানো সে কে?
আবু হুরাইরা বলল, না, আমি জানি না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, সে হল শয়তান।
(বর্ণনায় : বুখারী)
এ হাদীস থেকে আমরা যা শিখতে পেলাম তা হল:
(১) জনগণের সম্পদ পাহাড়া দেয়া ও তা রক্ষা করার জন্য আমানতদার দায়িত্বশীল নিয়োগ দেয়া কর্তব্য। আবু হুরাইরা রা. ছিলেন একজন বিশ্বস্ত আমানতদার সাহাবী।
(২) আবু হুরাইরা রা. দায়িত্ব পালনে একাগ্রতা ও আন্তরিকতার প্রমাণ দিলেন। তিনি রাতেও না ঘুমিয়ে যাকাতের সম্পদ পাহাড়া দিয়েছেন।
(৩) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর এটি একটি মুজেযা যে, তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত না থেকেও আবু হুরাইরার কাছে বর্ণনা শুনেই বুঝতে পেরেছেন শয়তানের আগমনের বিষয়টি।
(৪) দরিদ্র অসহায় পরিবারের বোঝা বাহকদের প্রতি সাহাবায়ে কেরামের দয়া ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ দয়াকে স্বীকৃতি দিলেন। তিনি আবু হুরাইরা রা. কে বললেন না, তাকে কেন ছেড়ে দিলে? কেন দয়া দেখালে?
(৫) সাহাবায়ে কেরামের কাছে ইলম বা বিদ্যার মূল্য কতখানি ছিল যে, অপরাধী শয়তান যখন তাকে কিছু শিখাতে চাইল তখন তা শিখে নিলেন ও তার মূল্যায়নে তাকে ছেড়েও দিলেন।
(৬) খারাপ বা অসৎ মানুষ ও জিন শয়তান যদি ভাল কোন কিছু শিক্ষা দেয় তা শিখতে কোন দোষ নেই। তবে কথা হল তার ষড়যন্ত্র ও অপকারিতা সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, সে তোমাকে সত্য বলেছে, তবে সে মিথ্যুক। এ বিষয়টিকে শিক্ষার একটি মূলনীতি হিসাবে গ্রহণ করা যায়।
(৭) জিন শয়তান মানুষের খাদ্য-খাবারে হাত দেয়। তা থেকে গ্রহণ করে ও নষ্ট করে।
(৮)আয়াতুল কুরসী একটি মস্তবড় সুরক্ষা। যারা আমল করতে পারে তাদের উচিত এ আমলটি ত্যাগ না করা। রাতে নিদ্রার পূর্বে এটি পাঠ করলে পাঠকারী সকল প্রকার অনিষ্টতা থেকে মুক্ত থাকবে ও জিন শয়তান কোন কিছু তার উপর চড়াও হতে পারবে না।
(৯) আয়াতুল কুরসী হল সূরা আল বাকারার ২৫৫ নং এই আয়াত :
اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ لَا تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ مَنْ ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلَا يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِنْ عِلْمِهِ إِلَّا بِمَا شَاءَ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَلَا يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ
অর্থ: আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, সুপ্রতিষ্ঠিত ধারক। তাঁকে তন্দ্রা ও নিদ্রা স্পর্শ করে না। তাঁর জন্যই আসমানসমূহে যা রয়েছে তা এবং যমীনে যা আছে তা। কে সে, যে তাঁর নিকট সুপারিশ করবে তাঁর অনুমতি ছাড়া? তিনি জানেন যা আছে তাদের সামনে এবং যা আছে তাদের পেছনে। আর তারা তাঁর জ্ঞানের সামান্য পরিমাণও আয়ত্ব করতে পারে না, তবে তিনি যা চান তা ছাড়া। তাঁর কুরসী আসমানসমূহ ও যমীন পরিব্যাপ্ত করে আছে এবং এ দুটোর সংরক্ষণ তাঁর জন্য বোঝা হয় না। আর তিনি সুউচ্চ, মহান।
শিক্ষণীয় গল্প.........